• শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০১:০১ অপরাহ্ন
শিরোনাম
লিচু’র টক মিষ্টি/ চাষিদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষি আবহাওয়া প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে পিকেএসএফ’র সহযোগী সংস্থার সাথে ট্রেড গ্লোবাল লিমিটেড’র সমঝোতা চুক্তি সম্পন্ন কাঁচা কাঁঠালের বাণিজ্যিক সম্ভাবনার হাতছানি বগুড়ায় গাক আয়োজিত লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ শুরু “নারী উন্নয়নের আলোকবর্তিকা” আক্কেলপুরের বহ্নিশিখা লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং কর্মীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন কৃষকের দুয়ারে আদনান বাবুর প্ল্যান্টডক্টর মোবাইল টিম করতোয়া নদী বাঁচাতে ১১ পয়েন্ট মানববন্ধন বৃষ্টি চলাকালীন এবং বৃষ্টি পরবর্তী বীজতলায় ধানের চারার যত্ন কৌশল

করতোয়া নদী বাঁচাতে ১১ পয়েন্ট মানববন্ধন

Reporter Name / ৪০৭ Time View
Update : শনিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২১

প্রতীক ওমর: করতোয়া নদীকে দখল, দুষণ মুক্ত করতে ১২৩ কিলোমিটার নদী অববাহিকার ১১ পয়েন্টে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বগুড়া শাখা এবং বেলা নেটওয়ার্ক। শনিবার বেলা ১১টায় একযোগে সংগঠনের কর্মী, পেশাজীবি এবং সাধারণ মানুষ এই মানববন্ধন করেন

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ হতে শুরু করে বগুড়ার শিবগঞ্জের গুজিয়া, মহাস্থান ব্রিজ মাটিডালী, কালিবালা লোহার ব্রিজ, সাতমাথা, এসপি ব্রিজ, বেজোড়া ব্রিজ, শাহজাহানপুরের মঝিড়া শেরপুরের গাড়িদহ এবং শেরপুর পর্যন্ত করতোয়া নদীর ১২৩ কিলোমিটার ব্যাপী এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

মানববন্ধনে উপস্থিত সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, দখল দূষণ, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং প্রবাহহীনতার কারণে বগুড়া তথা উত্তর জনপদের ঐতিহ্যবাহী নদী করতোয়া আজ মৃতপ্রায় নদীতে পরিণত হয়েছে। করতোয়া নদীকে দখল ও দূষণমুক্ত করাসহ নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করার জোর দাবী জানানো হয়।

এসময় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা বগুড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, করতোয়া নদী বগুড়ার প্রভাবশালীদের দখল এবং বিভিন্ন কারখানার ময়লা আবর্জনায় ভরে গেছে। আদালাত নদী থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীটিকে তার পূর্বের প্রবাহ ফিরে দেয়ার নিদের্শ দিয়েছে। আদালতের সেই নির্দেশ আজো বাস্তবায়ন করেনি প্রশাসন। ফলে প্রতি নিয়তই নদীটির বুকে নতুন নতুন অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠছে। আমরা এসব অবৈধ স্থাপনা দ্রুত সরানোর জন্য প্রশাসের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

পরিবেশ আন্দোলন বাপা বগুড়া শাখার সভাপতি আনোয়ারুল করিম দুলাল বলেন, বগুড়ার হাজার বছরের ঐতিহ্য গড়ে উঠেছিলো করতোয়ার কোল ঘেঁষে। নগর সভ্যতার ভিতগড়ে সেসময়ের পুন্ড্রনগর আজ ইতিহাস হয়ে আছে। সেই করতোয়া নদী কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি নিজের ব্যাক্তি স্বার্থে ক্ষমতার জোরে দখল করে রেখেছে। আদালত এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছদ করতে আদেশ দিলেও বাস্তাবয়ন হচ্ছে না। আদালাতের সেই রায় বাস্তবায়ন করার জন্য আমরা প্রশাসনকে অনেক বার অনুরোধ করেছি। প্রশাসন গুটি কয়েক প্রভাবশালীদের রক্ষা করতে সেই রায় বাস্তবায়ন করছেন না। আমরা আজকের মানববন্ধন থেকে আবারো প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তারা যদি করতোয়াকে দখল মুক্ত না করেন তাহলে আমরা পরবর্তীতে প্রশাসনিক দপ্তর ঘেরাও করার কর্মসূচি হাতে নেয়া হবে।

মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা। তিনি বলেন, করতোয়া নদীকে রক্ষা করতে সবাইকে এক সাথে কাজ করতে হবে। আমি এই আন্দোলনের সাথে একাত্ত্বা প্রকাশ করেছি। তিনিও করতোয়া দখল মুক্ত করতে আদালতের রায়ের দ্রত বাস্তবায়ন দেখতে চান।

মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়কারী তন্ময় কুমার সান্যাল, তিস্তা নদী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ফরিদ উদ্দিন, বেন অষ্ট্রেলিয়ার সভাপতি কামরুল আহসান, বগুড়া সদরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হায়দার আলী, বগুড়া বার সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. মোজাম্মেল হক, সু-শাসনের জন্য নাগরিক বগুড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম তুহিন, বগুড়া জেলা মহিলা লীগের সভাপতি হেফাজত আরা মীরা,বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বগুড়া শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি ডলার, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বগুড়া শাখার সদস্য তহমিনা পারভীন শ্যামলী, পরিবেশবাদী সংগঠন তীরের সাধারণ সম্পাদক রিফাতপ্রমূখ।

উল্লেখ্য, নদীটি রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার মিলনপুর ইউনিয়নে দেওনাই-চাড়াল কাটা-যমুনেশ্বরী নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নে বাঙ্গালী নদীতে পতিত হয়েছে। ১২৩ কিলোমিটার নব্বইয়ের দশকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাঁটাখালি সংলগ্ন চকরহিমপুর নামক স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ১৪৪ মিটার নব্বই ভেল্ট ক্ষমতা সম্পন্ন ১ টি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়। এই স্লুইসগেট নির্মাণ করে করতোয়ার প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করার কারণে গাইবান্ধার পরবর্তী এলাকায় নদীটি মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও তীরবর্তী লোকালয়, নগর ও শহরের বর্জ্য নদীতে ফেলাসহ দখল, দূষণ এবং অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীটি ভার স্বাভাতিক বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে। ফলে ধ্বংস হচ্ছে নদীতে বসবাসকারী প্রাণি ও উদ্ভিদ এবং জীবিকা হারিয়েছে অসংখ্য জেলে, মাঝিসহ করতোয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট নানা পেশার মানুষ। করতোয়া নদীকে বাঁচানোর দাবিতে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) জনস্বার্থে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। আদালত করতোয়া নদীর পানি প্রবাহ এলাকা ও সীমানা নির্ধারণপূর্বক গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের খুলশী সুইসগেট উন্মুক্তকরণসহ অন্যান্য অবৈধ দখল উচ্ছে করে নদীটির পানিপ্রবাহ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আদেশ দিয়েছে। সেই আদেশ আজো বাস্তবায়ন হয়নি।

ফলে প্রতিনিয়তই পরিবেশবিদরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। দীর্ঘ প্রায় সাত বছরেও আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে তেমন কোনো কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়নি। তাই করতোয়া নদী রক্ষায় আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে ১১ ডিসেম্বর এই মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। মানববন্ধন কর্মসূচিতে গাইবান্ধা এবং বগুড়ার বিভিন্ন সংগঠন, ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী এবং সাধারণ মানুষের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিলো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category